সৌদির নতুন বিধিনিষেধ: দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা দুর্ভোগে

সৌদি আরবে প্রবেশের পর বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং সৌদি আরবগামী সবার বাধ্যতামূলক মেডিকেল ইনস্যুরেন্স থাকতে হবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, একই সাথে যেন করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসা খরচ বীমার আওতায় বহন করা যায়।

সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের সৌদি থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং উপসাগরীয় দেশগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। আজ শনিবার নগরীর কাওরানবাজারে সৌদিয়া এয়ারলাইনসের অফিসে সঙ্গে আলাপকালে সৌদি প্রবাসী কর্মীরা জানান, নতুন শর্ত মানতে হলে তাদের প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।

গত ২০ মে থেকে কার্যকর হওয়া নতুন ভ্রমণ বিধিনিষেধের পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সৌদি আরবগামী সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ২৪ মে পর্যন্ত পাঁচ দিনের জন্য স্থগিত করতে বাধ্য হয়। বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, নতুন ভ্রমণ নিয়ম মেনে যাতায়াত ব্যবস্থা শুরু করতে সময় দরকার।

বিমানের ফ্লাইট স্থগিতের কারণে সৌদি আরব যেতে ব্যর্থ কয়েক হাজার প্রবাসী শ্রমিক ঠিক সময়ে সৌদি আরবে কর্মস্থলে ফিরে যেতে না পারার আতঙ্কে আছেন। এ সময়ের মধ্যে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সূত্র জানায়, বিমানের ফ্লাইট স্থগিত হওয়ার কারণে কয়েক হাজার বাংলাদেশি কর্মী সৌদি আরবে সময়মতো তাদের কর্মস্থলে ফিরতে পারবে কিনা এ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।

রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দা- এই তিন গন্তব্যে সপ্তাহে ১৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করছিল বিমান।

নতুন ভ্রমণ বিধিনিষেধ

সৌদি অ্যারাবিয়া জেনারেল অথরিটি সিভিল অ্যাভিয়েশন (জিএসিএ) এর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সৌদি আরবে প্রবেশের পর বাধ্যতামূলকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার নিয়ম করেছে সৌদি সরকার। এছাড়া, সৌদি আরবগামী সবার বাধ্যতামূলকভাবে মেডিকেল ইনস্যুরেন্স থাকতে হবে, যেন করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসা খরচ বীমার আওতায় বহন করা যায়।

নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ক্লিনিক, ইমার্জেন্সিসহ হাসপাতালের চিকিৎসার সব খরচ মেডিকেল ইনস্যুরেন্সের আওতায় বহন করা হবে। ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনও মেডিকেল বীমার অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।’

এদিকে, ভ্রমণের ক্ষেত্রে সৌদি নাগরিক ও তাদের সঙ্গীদের মধ্যে যারা টিকার দুই ডোজই নিয়েছেন কিংবা ১৪ দিনের মধ্যে প্রথম ডোজ দিয়েছেন অথবা ছয় মাসের মধ্যে করোনা থেকে সেরে উঠেছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। এর কোনোটিই না হলে সৌদি আরবে প্রবেশের পর বাধ্যতামূলকভাবে সাত দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফাইজার বায়োএনটেক ভ্যাকসিনের দুই ডোজ, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের দুই ডোজ, মডার্না ভ্যাকসিনের দুই ডোজ এবং জনসনের ভ্যাকসিনের একটি ডোজ নেওয়ার ১৪ দিন পরে যেসব যাত্রীরা সৌদিতে প্রবেশ করবেন তাদের ক্ষেত্রেও এ ছাড় দেওয়া হবে। তবে সেক্ষেত্রে যে দেশে টিকা নেওয়া হয়েছে সে দেশের কর্তৃপক্ষের দ্বারা সত্যায়িত ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট অবশ্যই থাকতে হবে।

এর বাইরে যেসব সৌদি নাগরিক ও তাদের গৃহকর্মী, কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সৌদিতে প্রবেশ করবেন তাদের সবাইকেই সাত দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং ষষ্ঠ দিন করোনা পরীক্ষা করতে হবে। সৌদি আরবে প্রবেশের পর সব ভ্রমণকারীকে নিজ খরচে সাত দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং প্রথম দিন ও সপ্তম দিন পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে। আট বছরের কম বয়সীদের জন্য পিসিআর পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।

উড়োজাহাজ চলাচল সংস্থাগুলোকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের চুক্তির বিষয়ে জিএসিএ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। সমস্ত ভ্রমণকারীদের প্রথম ও সপ্তম দিনে দু’টি পিসিআর পরীক্ষার জন্য উড়োজাহাজ চলাচল সংস্থাগুলো মেডিকেল কেয়ার সেন্টারগুলোর সঙ্গে চুক্তি করবে ও যাত্রীদেরকে পরিবহন সুবিধা দেবে। এয়ারলাইনসগুলোর কাছে সৌদি আরব যাত্রার চার দিন আগে যাত্রীদের তালিকাও চেয়েছে।

সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন